স্টাফ রিপোর্টার: নিজ পরিষদের কাউন্সিলরকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন রাজশাহীর কাঁকনহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল মজিদ। এরই মধ্যে ঈদ শুভেচ্ছা জানিয়ে ভোটের আগাম আলোচনায় এসেছেন পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহীল কাফি। এরপর থেকেই বাড়ছে উত্তাপ। চলছে কথার লড়াই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০০২ সালে পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর প্রশাসকের দায়িত্বপালন করেন আবদুল মজিদ। এর পরের তিনটি নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন তিনি। পৌরসভায় নিজের একক আধিপত্য ধরে রেখেছেন তিনি।
স্থানীয়রা বলছেন, মেয়র মজিদ গরহাজির পৌরসভায়। তিনি ঢাকায় থাকেন মাসের অধিকাংশ সময়। পরিষদে গিয়েও দেখা পান না নাগরিকরা।
বাস্তবে নেই, তিনি কাজ করছেন কাগজে কলমে। প্রকল্প বাস্তবায়নের নামে রয়েছে অর্থ লোপাটের অভিযোগ। এ নিয়ে মেয়র বিরোধে জড়িয়েছেন খোদ কাউন্সিলরদের সাথে। একাধিক অভিযোগও জমা পড়েছে দুদকসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন দপ্তরে। তবুও মেয়র মজিদ রয়ে গেছেন বহাল তবিয়তে।
স্থানীয় আওয়ামী লীগের একটি সূত্র বলছে, বহিরাগত হিসেবেই দলের হাইকমান্ডের তালিকায় মেয়র মজিদের নাম রয়েছে। বিএনপির নেতৃত্বে থাকাকালীন তিনি আওয়ামী লীগ নেতাদের ওপর নীপিড়ন চালিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর খোলস বদলেছেন। আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েও হয়েছেন খড়্গহস্ত। আগামী নির্বাচনের আলোচনা শুরু হতেই ফের গোপন তৎপরতা শুরু করেছেন মেয়র মজিদ।
স্থানীয়রা বলছেন, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল্লাহীল কাফির বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে লড়াইয়ে নেমেছেন মেয়র মজিদ। আপস না করায় বারবার মেয়র মজিদের রোষানলে পড়েছেন কাউন্সিলর কাফি।
জানা গেছে, কাঁকনহাট পৌরসভা গঠনের সময় আবদুল মজিদ ছিলেন গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সভাপতি। ওই পদে থেকেই তিনি পৌরসভার প্রশাসকের দায়িত্ব পান।
২০০৪ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি প্রথম নির্বাচন হয়। বিএনপির প্রার্থী হয়ে আবদুল মজিদ সেই নির্বাচনে নামেন। ওই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন কাউন্সিলর আব্দুল্লাহীল কাফির চাচাতো ভাই আওয়ামী লীগ নেতা আবদুর রাকিব সরকার। সেই নির্বাচনে মজিদ হারিয়ে দেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে।
আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে ২০১১ সালে আবারও মেয়রের নির্বাচন করেন আবদুল মজিদ। সেই নির্বাচনেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আবদুর রাকিব সরকার। ওই নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হন কাফিও। দলের সিদ্ধান্ত মেনে পরে মনোনয়ন প্রত্যাহার করেন তিনি।
সর্বশেষ ২০১৫ সালের নির্বাচনেও নৌকার প্রার্থী হয়ে মেয়র নির্বাচিত হন আবদুল মজিদ। ওই নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন আব্দুল্লাহীল কাফি। পরিষদে গিয়ে মেয়রের অপকর্ম দেখে বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দেন তিনি। এরপর থেকে মেয়র তার সম্মানী ও ভাতা বন্ধ করে দেন।
কাফির বলেন, তিনি ও তার পরিবার কট্টর আওয়ামী লীগ। তার চাচাতো ভাই আবদুর রাকিব সরকার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র মজিদের সাথে একাধিকবার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তিনি নিজেও প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। সঙ্গত কারণেই এবারও তাকেই প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন মেয়র মজিদ।
কাফি বলেন, প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবলে দোষ নেই, কিন্তু অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন মেয়র মজিদ। তাকে নানান কায়দায় অপরাধী এমনকি চরমপন্থী হিসেবে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালাচ্ছেন। এটি চরম অন্যায়। বরং মেয়র মজিদ নিজেই জেএমবির মদদদাতা।
তৎকালীন জেএমবির পৃষ্ঠপোষক প্রয়াত বিএনপির সিনিয়র নেতা ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ‘কাছের মানুষ’ ছিলেন মেয়র মজিদ। সেই বৃত্ত থেকে তিনি বের হতে পারেননি। যারাই তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হয়েছেন, তাদেরই তিনি শেষ করে দিয়েছেন।
মেয়র মজিদের সাথে তার বিরোধ বহু পুরোনো জানিয়ে আব্দুল্লাহীল কাফি বলেন, ১৯৯৫ সাল থেকে তিনি কাঁকনহাট মহাবিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন। পৌরসভা গঠনের পর ২০০২ সালে তিনি পৌর যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
ওই সময় জাতীয় নির্বাচনে কাঁকনহাট মহাবিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার প্রধান সমন্বয়ক ছিলেন তিনি। বিএনপি নেতা ও পৌর প্রশাসক হিসেবে ভোট চলাকালে সেখানে ধানের শীষের হয়ে অবৈধ প্রভাব বিস্তার করতে গিয়েছিলেন মেয়র মজিদ। কিন্তু তিনিই তাকে বাধা দেন। ওই নির্বাচনে বিএনপি জয়লাভ করলে পরে যৌথবাহিনীর হাতে তাকে তুলে দেন মেয়র মজিদ। পরে উচ্চ আদালতে জামিনে তিনি মুক্তি পান।
কাফি আরও বলেন, পৌরসভায় ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল হয়। সেই কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী হন তিনি। তাতে সভাপতি প্রার্থী ছিলেন মেয়র মজিদ। কতিপয় শীর্ষ নেতাকে ম্যানেজ করে পৌর সভাপতি হন মজিদ। ওই কমিটির সদস্য হিসেবেও রাখা হয়নি তাকে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই তিনি এমনটি করেছেন।
তবে কাউন্সিলর আব্দুল্লাহীল কাফির বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগ অস্বীকার করেন পৌর মেয়র আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, আব্দুল্লাহীল কাফি কাউন্সিলর নন, বহিষ্কৃত। আমার কাছেও তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আসে। তার কর্মকাণ্ড পৌরসভার সুনাম ক্ষুণ্ন করছে। এটা এলাকার উন্নয়নেও প্রভাব ফেলেছে।
আগামী নির্বাচনে আবারও ভোটের লড়াইয়ে নামবেন জানিয়ে মেয়র মজিদ বলেন, নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নের ব্যাপার রয়েছে। দল যাকে মনোয়ন দেনে-তিনিই দলীয় প্রার্থী হবেন।
এখনই কাউকে প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবছেন না জানিয়ে মেয়র মজিদ বলেন, নির্বাচন প্রকাশ্য ব্যাপার। এখানে যে কেউ প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন। দলীয় মনোনয়ন পেয়ে এমনকি না পেয়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। আব্দুল্লাহীল কাফিও প্রতিদ্বন্দ্বি হতে পারেন।
আপনার মন্তব্য