স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক)  হাসপাতাল সংলগ্ন তিনটি ওষুধের দোকানে মিলেছে অন্তত ৩০ লাখ টাকা মূল্যের ‘স্যাম্পল’ ওষুধ। আর এসব ওষুধ সরবরাহ করেছেন রাজশাহীর অন্তত ৮০ জন চিকিৎসক।

 মঙ্গলবার রাতে নগরীর লক্ষ্মীপুর মোড় এলাকার ওই তিনটি ওষুধের দোকানে অভিযান চালিয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশ এসব ওষুধ পায়। সেখানকার একটি ফার্মেসিতে পাওয়া যায় ওই ৮০ জন চিকিৎসকের নাম-মোবাইল নম্বর সম্বলিত তালিকা। যেখানে রাজশাহীর অনেক নামকরা চিকিৎসকও রয়েছেন।

ওষুধ বিক্রেতারা স্বীকার করেছেন, ওই ৮০ জন চিকিৎসক তাদের কাছে ‘স্যাম্পল’ ওষুধ বিক্রি করে আসছেন। কখনো কখনো দালাররা চিকিৎসকদের কাছ থেকে ওষুধ সংগ্রহ করে তাদের কাছে নিয়ে আসছেন। পরে সেগুলো মোড়ক বদলে দীর্ঘদিন ধরেই বিক্রি করে আসছিলেন তারা।

ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ এসব ওষুধ বিক্রি এবং বিক্রির জন্য সংরক্ষণের দায়ে পরে ফার্মেসিকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর লক্ষ্মীপুর এলাকার মডার্ণ মার্কেটের আনোয়ারা ফার্মেসিকে ২৫ হাজার টাকা এবং  বিসমিল্লাহ ফার্মেসি ও মা-বাবা ফার্মেসিকে ১৫ হাজার টাকা করে জরিমানা করে। 

তবে এই ঘটনায় কাউকে আটক করা হয়নি, ওষুধও জব্দ করা হয়নি। তবে ফার্মেসি মালিকেরা যেসব স্থান থেকে ওষুধ সংগ্রহ করেছেন তিন দিনের মধ্যে সেখানেই ফিরিয়ে দেয়ার নির্দেশ নেয়া হয়েছে।

নগর গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, অভিযান চলাকালে আনোয়ারা ফার্মেসি থেকে ওই ৮০ জন চিকিৎসকের নামের তালিকা পাওয়া গেছে। যারা সেখানে এসব ওষুধ সরবরাহ করেন। 

ওই তালিকায় রাজশাহীর খ্যাতনামা অনেক চিকিৎসকের নামও রয়েছে। এখন থেকে তাদের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হবে। এখন থেকে নিয়মিতই স্যাম্পল ওষুধ ধরতে অভিযানও চালবে।

আনোয়ারা ফার্মেসির মালিক আহসান হাবিব নাজমুল বলেন, চিকিৎসকরা ফোন করে তাদের বাসায় অথবা চেম্বারে ডেকে নিয়ে এসব ওষুধ দেন। কখনো কখনো দালালেরা নিজেরাই চিকিৎসকের কাছ থেকে ওষুধ এনে তাদের কাছে দেন।  ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ দামে তারা ওষুধগুলো কিনে প্রচলিত দামেই বিক্রি করেন।

রাজশাহী নগর ডিবি পুলিশের উপ-কমিশনার আবু আহম্মাদ আল মামুন বলেন, ফিজিশিয়ান স্যাম্পল ওষুধ ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ। ওষুধ কোম্পানীগুলো চিকিৎসকদের এগুলো দেন রোগীদের বিনামূল্যে দেয়ার জন্য। এসব ওষুধের প্যাকেটেই লেখা থাকে- ‘এগুলো স্যাম্পল। ক্রয়-বিক্রয় নিষিদ্ধ’। 

কিন্তু অনেক চিকিৎসক এগুলো ফার্মেসিতে বিক্রি করে দেন। ফার্মেসি মালিকরা তখন এসব ওষুধ পুরনো প্যাকেটে ঢুকিয়ে বিক্রি করেন। এটি অপরাধ। সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে জনস্বার্থে অভিযানটি চালানো হয়েছে। পরে তারা সংশ্লিষ্ট অন্য বিভাগকে খবর দেন।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের রাজশাহী জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক হাসান আল-মারুফ জানান, স্যাম্পল ওষুধ ক্রয়-বিক্রয়ের অপরাধে ভোক্তা অধিকার আইনে তিনটি ফার্মেসিকে ৫৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। কাউকে আটক করা হয়নি। ওষুধও বাজেয়াপ্ত করা হয়নি।

হাসান আল মারুফ বলেন, ব্যবসায়ীরা পথে বসে যাক এটা আমরা চাই না। কারণ, তারাও টাকা দিয়েই ওষুধগুলো কিনেছেন। আমরা তিন ব্যবসায়ীকে বলেছি- তারা যেখান থেকে ওষুধগুলো এনেছেন সেখানেই ফেরত দেবেন। এই ফেরত প্রক্রিয়াটা আমরা নিশ্চিত করব। তাহলে ব্যবসায়ীরাও টাকা ফেরত পাবেন এবং ওষুধগুলোও সাধারণ রোগীদের কাছে পৌঁছাবে।

Leave a Reply