স্টাফ রিপোর্টার: বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একই গ্রামের এক গৃহবধূর (২৫) সাথে শারীরিক সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন এক কলেজছাত্র। সম্প্রতি ওই গৃহবধূর ঘর থেকে আপত্তিকর অবস্থায় ধরা পড়েন অভিযুক্ত কলেজছাত্র।
এনিয়ে ওই গৃহবধূর পরিবার আইনী ব্যবস্থা নিতে চাইলে তড়িঘড়ি করে ৪ লাখ টাকায় ধামাচাপা দিয়েছেন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও কয়েকজন সদস্য।
কিন্তু এক টাকাও হাতে পাননি ভুক্তভোগী গৃহবধূ। উল্টো এই ঘটনার পর তাকে গ্রাম ছাড়া করা হয়েছে।
নওগাঁর পোরশা উপজেলার ছাওড় ইউনিয়নের বাকইল এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
ভুক্তভোগী গৃহবধূ ওই গ্রামের বাসিন্দা। অভিযুক্ত কলেজছাত্র মুজাহিদ (২৭) একই গ্রামের মুজিবর রহমানের ছেলে।
এলাকাবাসীর অভিযোগ, এই ঘটনার পর শিশু সন্তানসহ ওই গৃহবধূকে এলাকাছাড়া করেছেন চেয়ারম্যান-মেম্বররা। কিন্তু ধর্ষকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। এলাকায় দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন অভিযুক্ত কলেজছাত্র।
বাবার বাড়ি নিয়ামতপুরের রসুলপুর ইউনিয়নের ভীমপুরে আশ্রয় নিয়েছেন ভুক্তভোগী ওই গৃহবধূ। সেখানে তিনি প্রতিবেদককে জানিয়েছেন, তার স্বামীর বাড়ির পাশে মুজাহিদের আমবাগানসহ জমি রয়েছে। মাঝে মধ্যেই সেখানে তিনি আসতেন। একদিন একা পেয়ে জোর করে তাকে ধর্ষণ করেন মুজাহিদ।
বিষয়টি জানাজানি করলে প্রাণনাশের হুমকি দেন। এরপর থেকে বিয়ের প্রলোভনে নিয়মিত তাকে ধর্ষণ করে আসছিলেন মুজাহিদ।
ওই গৃহবধূ আরো জানান, এক মাস আগে তার স্বামীর অনুপস্থিতিতে রাতে তার ঘরে ঢুকেছিলেন মুজাহিদ। তিনি টেরই পাননি। রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পর মুখ চেপে তাকে জোর করে ধর্ষণ করেন মুজাহিদ। টের পেয়ে তার শ্বাশুড়ি এসে হাতেনাতে ধরে ফেলেন। কিন্তু তাকে ফেলে দিয়ে মুজাহিদ পালিয়ে যান।
তাৎক্ষনিকভাবে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন বিষয়টি ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম ও মেম্বর এমাজ উদ্দিনকে জানান। তারা ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস দিয়ে ধর্ষককে ছেড়ে দেন। উল্টো অপবাদ দিয়ে তাকে সন্তানসহ এলাকাছাড়া করেন।
সোমবার বাকইল এলাকায় ধর্ষক মুজাহিদের বাড়িতে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। ফলে এই ঘটনার তার মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
ওই সময় বাড়িতে ছিলেননা মুজাহিদের বাবা মুজিবর রহমানও। তার মা হামিদা বেগম জানান, বাবা-ছেলে দুজনই ক্ষেতের কাজে গেছেন।
হামিদা বেগম জানান, টাকা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বররা মিলে ঘটনাটি মিমাংসা করে দিয়েছেন। চেয়ারম্যান-মেম্বররা বলেছেন, এখন আর কোন সমস্যা নেই।
তিনি দাবি করেন, মুজাহিদ এমন ছেলে নয়, তাকে ফাঁসানো হয়েছে। তবে টাকা দিয়ে মিমাংসা কেনো জানতে চাইলে বিষয়টি পরিবারের কর্তা জানেন বলেও জানান হামিদা বেগম।
ধর্ষণের শিকার ওই গৃহবধূর স্বামীর বাড়িতে গিয়েও সোমবার কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা জানিয়েছেন, গৃহবধূর স্বামীর পরিবার খুবই গরিব। সরকারী খাস জমিতে বসবাস করে আসছেন।
আর ধর্ষক মুজাহিদের পরিবার বেশ অবস্থাপন্ন। টাকা দিয়ে তারা চেয়ারম্যান-মেম্বরদের হাত করেছে গৃহবধূকে এলাকাছাড়া করেছেন। প্রতিকার পেতে তাকে থানায় যেতেও দেননি।
অভিযোগ বিষয়ে জানতে সোমবার দুপুরে ছাওড় ইউনিয়ন পরিষদ ভবনে গিয়ে পাওয়া যায়নি চেয়ারম্যান-মেম্বর কাউকেই। চৌকিদার মানিক চাঁদ জানিয়েছেন, কিছুক্ষণ আগেও সবাই ছিলেন। কিন্তু তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে গেলেন। যাবার সময় সবগুলো কক্ষে তালা দিতে বলে যান। তারা আর ফিরবেন কি না জানিয়ে যাননি।
ইউনিয়ন পরিষদের মেম্বর এমাজ উদ্দিনের মুঠোফোনে কয়েক দফা চেষ্টা করেও তার সংযোগ পাওয়া যায়নি। ফলে এনিয়ে তার মন্তব্য মেলেনি।
তবে মুঠোফোনে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম জানান, ঘটনাটি তিনি জানেন, কিন্তু মিমাংসায় তিনি ছিলেন না। তার পরিষদের কয়েকজন মেম্বর এটির সাথে ছিলেন। টাকা লেনদেন হয়ে থাকলে তারাই বিষয়টি বলতে পারবেন।
এমন ঘটনা সালিশে নিস্পত্তির সুযোগ আছে কি না জানতে চাইলে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নেই। তবে এনিয়ে ওই গৃহবধূ গ্রাম আদালতে অভিযোগ দিয়েছেন। সেটি আমলে নিয়ে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
তবে ধর্ষণেরমত ঘটনা গ্রাম আদালতে বিচারযোগ্য কি না জানতে চাইলে সদুত্তোর দিতে পারেননি চেয়ারম্যান।
স্থানীয়দের অভিযোগ, নির্বাচিত চেয়ারম্যান ফখরুদ্দীন আলী আহমেদ সাময়িক বরখাস্ত হবার পর চেয়ারম্যানের চেয়ারে আসেন শরিফুল ইসলাম।
এরপর থেকে কয়েকজন মেম্বরকে নিয়ে এলাকায় সালিশের নামে অর্থ বাণিজ্য ছাড়াও সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির তালিকাভুক্তির নামে মোটা অংকের অর্থ নিচ্ছেন। উন্নয়ন কাজের বরাদ্দেও বসাচ্ছেন ভাগ।
ক্ষমতাশীন দলের রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কেউ মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেননা।
Leave a Reply