স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী: বাসায় বসে করোনার টিকা নিয়েছেন রাজশাহীর তানোর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না। মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পৌর সদরের তার সরকারী বাসায় বসে টিকা নিয়েছেন তিনি।
নির্ধারিত টিকাদান কেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তার বাসার দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে দুজন কর্মী গিয়ে চেয়ারম্যানকে টিকা দিয়ে এসেছেন।
তবে টিকা পুশ করেছেন টিকাবহনকারী নিশান। এসময় টিকাদানকর্মী জহির উদ্দিন সেখানে উপস্থিত ছিলেন। চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত সহকারী পরিচয়দানকারী জামিলুর রহমান টিকাদানের ছবি মোবাইলে ধারণ করে পরে সামাজিক যোগোযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেন।
ও্ট পোস্টে টিকা পাওয়ায় চেয়ারম্যান প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেন। সবাইকে টিকা নেয়ারও বার্তা দেয়া হয় সেখানে। মুহূর্তেই এ ঘটনা চড়িয়ে পড়ে। চেয়ারম্যানের এমন কাণ্ডে ক্ষোভ জানান এলাকার সচেতন লোকজন। এরপরই তড়িঘড়ি করে সেই পোস্ট মুছে দেন জামিলুর রহমান।
বাসায় বসে টিকা নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না নিজেই। তিনি জানান, তিনি মঙ্গলবার করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন। ৩১ মে তার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার কথা ছিলো। অসুস্থ্যতাজনিত কারণে সময়মত টিকা নিতে পারেননি।
তিনি দাবি করেন, টিএইচও গত কয়েকদিন ধরেই তাকে জানাচ্ছিলেন-ভ্যাকসিন এসেছে। দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার জন্য তাগাদাও দিচ্ছিলেন। দাফতরিক কাজে বুধবার নাগাদ তিনি ঢাকায় যাবেন। বিষয়টি টিএইচও কে ফোনে জানান। এরপর তার বাসায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে তার বাসায় টিকা পাঠানো হয়।
চেয়ারম্যানের বাসায় দুই কর্মীসহি টিকা পাঠানোর বিয়ষটি স্বীকার করেছেন তানোর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা. বার্নাবাস হাঁসদাক। তিনি দাবি করেন. বৃহস্পতিবর একটি বিশেষ ক্যাম্পেইনে চেয়ারম্যানের টিকা নেয়ার কথা ছিল।
কিন্তু যেহেতু তিনি সেদিন থাকবেন না, সেহেতু আগেভাগেই তার বাসায় ভ্যাকসিনসহ টিকাদানকর্মী পাঠানো হয়েছে। টিকাদানকর্মী জহির উদ্দিন ওই সময় সেখানে ছিলেন। তিনি টিকা পুশ না করলেও তার তত্ত্বাবধানেই আরেকজন টিকা পুশ করেছেন।
এবিষয়ে চানতে রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদাররের মোবাইল সংযোগ পাওয়া যায়নি।
তবে রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্য দফতরের পরিচালক ডা. হাবিবুল আহসান তালুকদার জানিয়েছেন, নির্ধারিত কেন্দ্রের বাইরে গিয়ে কোনো ভাবেই টিকাদানের সুযোগ নেই। এমনকি ক্যাম্পেইন চলাকালেও বাসায় গিয়ে টিকাদানের সুযোগ নেই।
আগে থেকেই বিষয়টি কঠোরভাবে মেনে চলার নির্দেশনা দেয়া ছিলো। যিনি নিয়েছেন এবং যিনি দিয়েছেন-এই ঘটনায় দুজই দায়ি। বিষয়টি সিভিল সর্জন দফতর খতিয়ে দেখবে। এই ঘটনায় কারো অবহেলা পেলে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
প্রসঙ্গত, টিকাদান ক্যাম্পেইন চলাকালে ৭ আগস্ট বাসায় বসে করোনার টিকা নেন চট্টগ্রামের এক ব্যাংকার ও এক ব্যবসায়ী। ঘটনা জানাজানি হলে টিকাগ্রহীতা ও সহায়তাকারীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বাসায় বসে টিকা নেয়ার পর এরাও ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।
Leave a Reply