চাঁপাইনবাবগঞ্জ: কয়েকদিন আগেও থোকায় থোকায় ঝুলছিল আম্রপালি, গৌড়মতি, বারি-৪, হিমসাগরসহ বিভিন্ন জাতের বিভিন্ন আম। কিন্তু ৭-৮ বছর বয়সী গাছগুলো থেকে আম পাড়া শেষ হতেই দুই শতাধিক গাছ কেটে ফেলেছে দুর্বৃত্তরা। শত্রুতার জেরে স্থানীয় রাখালরা রাতের অন্ধকারে গাছগুলো কেটেছে বলে অভিযোগ করেছেন বাগান মালিক।
মঙ্গলবার (১০ আগস্ট) রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার ঘোড়াপাখিয়া ইউনিয়নের পাগলা নদীসংলগ্ন ৪ ও ৫ নম্বর বাঁধের মধ্যবর্তী আম বাগানের এসব গাছ কেটে ফেলা হয়েছে।
এক কলেজ শিক্ষকের ৬ বিঘা জমিতে লাগানো এসব আমগাছ রাতের আঁধারে কুড়াল ও দা দিয়ে কেটে ফেলে দুর্বৃত্তরা। বাগান মালিক কৃষ্ণগোবিন্দপুর ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান এ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের নিকট অভিযোগ করেন।
বাগানের মালিক ও স্থানীয় বাসিন্দা সূত্রে জানা যায়, পাগলা নদীসংলগ্ন ৪ ও ৫ নম্বর বাঁধের মধ্যবর্তী এলাকায় অনেক বড় বড় আম বাগান রয়েছে। কিন্তু পদ্মার চর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বছরের এই সময়ে রাখালরা আম বাগানে গরু চরায়।
চরানোর সময় গরুতে ঘাস খাওয়ার পাশাপাশি আমের পাতা, ডাল ও গাছের ব্যাপক ক্ষতি করে। এ নিয়ে এই এলাকার সব বাগান মালিক ২০১৮ সালে রানিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহসিন আলীর নিকট অভিযোগ করেন।
জানা যায়, অভিযোগের পর চেয়ারম্যানের পরামর্শে বাগান মালিকরা মিলে আমসহ মাঠের বিভিন্ন ফসল রক্ষা করতে ২০ সদস্যের একটি মাঠ রক্ষা কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির কোষাধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন কলেজ শিক্ষক কামরুজ্জামান।
বাগানের সব আম পাড়া শেষে প্রতি বছরের ন্যায় ৮ আগস্ট বাগানে গরু না চরানোর নির্দেশ দিয়ে মাঠ রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়। তার এক দিন পরই মাঠ কমিটির কোষাধ্যক্ষ শিক্ষক কামরুজ্জামানের বাগানের ২ শতাধিক বিভিন্ন জাতের আমগাছ কেটে ফেলা হয়।
সদর উপজেলার হাট-রামচন্দ্রপুর গ্রামের মৃত মওলানা নজরুল ইসলামের ছেলে শিক্ষক কামারুজ্জামান বলেন, বাগানের সব গাছ মাঝখান থেকে কেটে দেওয়া হয়েছে। রাতের অন্ধকারে গাছগুলো কাটা হয়েছে। তাই সুনির্দিষ্ট করে কাউকে অভিযুক্ত করা যাচ্ছে না।
আম্রপালি, গৌড়মতি, বারি-৪, হীমসাগরসহ উন্নত নাবি জাতের বিভিন্ন আমের বাগান গড়ে তুলেছি। এ বছরও প্রত্যেক গাছে প্রচুর পরিমাণে আম এসেছিল। তিল তিল করে গড়ে তোলা আম বাগান রাতের আঁধারে শত্রুতা করে নিমিষেই কেটে দিল একদল দুর্বৃত্ত বলে জানান তিনি।
তিনি আরও বলেন, বাড়ির পাশের কলেজে চাকরি করার সুবাদে বেশিরভাগ সময় অবসরে বাড়িতে থাকি। সেই সূত্রে অধিকাংশ সময় বাগানে এ সকল আম গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকতাম। আমার সন্তানের মতো করে গড়ে তোলা গাছগুলো কেটে আমার বুকের পাঁজর ভেঙে দিয়েছে। এতে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষক বলেন, কয়েক বছর থেকে আম বাগানে গরু চরিয়ে ব্যাপক ক্ষতি সাধন করে আসছিল। নিষেধ করতে গেলে গরুর মালিক ও রাখালরা বিভিন্ন উচ্চবাচ্য করে এবং হুমকি-ধমকি দেয়। বাধ্য হয়ে মাইকিং করা হয় বাগান এলাকায় গরু না চরানোর জন্য। এতে করে আমার ওপর গরুর রাখালরা ক্ষিপ্ত হয়ে রাতের আঁধারে গাছ কেটে ফেলেছে।
রানিহাটি ইউপি চেয়ারম্যান মহসিন আলি বলেন, রাতের অন্ধকারে গাছ কাটার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। মাঠ রক্ষা কমিটির সার্বিক কার্যক্রম নিয়ে আমি শুরু থেকেই অবহিত। বাগান মালিক ও মাঠ রক্ষা কমিটির পক্ষ থেকে আমাদের কাছে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
Leave a Reply