আফগান নারীদের বাঁচার আকুতি

বিদেশ ডেস্ক: আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের বাসিন্দাদের কাছে প্রতিটি রাতই এখন দুঃসহ। শহরজুড়েই আতঙ্ক বিরাজ করছে। কাবুলে এক দশকেরও বেশি সময় ধরে কাজ করা বিবিসির সাংবাদিক ইয়ালদা হাকিম জানান, শহরের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাহায্য চেয়ে তাঁর কাছে খবর পাঠিয়ে যাচ্ছেন আফগান নারী-পুরুষরা।

একজন হাকিমের মোবাইল ফোনে বার্তা পাঠিয়েছেন ‘আমাদের জন্য দোয়া করুন’ লিখে। এক আফগান মা লিখেছেন, ‘অবস্থা খুব জটিল, আমরা খুবই চিন্তিত।’

কাবুলের বাসিন্দারা এখনো বিষয়টি বিশ্বাস করতে পারছে না জানিয়ে হাকিম বলেন, কাজ করতে গিয়ে তিনি সাংবাদিক, নারী বিচারক, পার্লামেন্টের নারী সদস্য, মানবাধিকারকর্মী ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মিশেছেন।

তাঁদের সবার ভাষ্য মোটামুটি এক রকম—প্রায় ২০ বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্র ও এর মিত্ররা আফগান নারীদের ঘরের বাইরে বের হতে উৎসাহ জুগিয়েছে। তাদের অর্থায়নে ও আশ্রয়ে নতুন প্রজন্মের আফগানরা পূর্ণ স্বাধীনতা ও সুযোগ নিয়ে বেড়ে উঠেছে।

কিন্তু এখন তারা নিজেদের পরিত্যক্ত ভাবছে। এত দিন গণতান্ত্রিক বিশ্বের একটা অংশ মনে করা এসব আফগান নাগরিককে পশ্চিমা বিশ্ব ত্যাগ করছে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তারা।

এক নারী হাকিমকে বলেন, ‘কাবুল দখল করলে আফগান সরকার ও মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে তালেবান হত্যা করবে—এমন গুজব ছড়াচ্ছে। আমরা খুবই ভয়ে আছি।’

এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘একজন শিক্ষিত তরুণী ও সমাজকর্মী হিসেবে আমি ভয় পাচ্ছি, তালেবান আমাকে ও আমার পরিবারকে হত্যা করবে।’ আরেক নারী বলেন, ‘পরিচয় লুকাতে আমরা আমাদের সব কাগজপত্র মাটিচাপা দিয়েছি।

যদিও এটা আমাদের খুব বেশি সময় দেবে না। বুলেট ও ক্ষেপণাস্ত্র থেকে বাঁচতে আমি পরিবার নিয়ে মাটির নিচে ঘর বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এ নিরাপত্তা পদক্ষেপ আমাদের ততক্ষণ পর্যন্ত বাঁচিয়ে রাখবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না তালেবান ঘরে ঘরে হানা দেয়।’

সম্প্রতি কাবুল সফরে গিয়ে হাকিম তালেবানের সম্মুখসারির কয়েকজন কমান্ডার ও পদাতিক সেনার সঙ্গে কথা বলেন। তালেবান দেশটিতে শরিয়াহ আইন প্রয়োগের ব্যাপারে তাদের সংকল্পের কথা জানায়।

এ আইন প্রয়োগ করা হলে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্কে জড়ালে পাথর নিক্ষেপ করা, চুরির অপরাধে অঙ্গচ্ছেদ করা, ১২ বছরের বেশি বয়সী মেয়ে শিশুদের স্কুলে যাওয়া নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হবে।

হাকিম জানান, এসবের কোনো কিছুর সঙ্গেই আফগান নারীরা পরিচিত নয়, তারা এসব চায়ও না। তবে তালেবান কাবুলের দিকে অগ্রসর হওয়ায় এসব থেকে তাদের পালিয়ে বাঁচার উপায়ও নেই। 

Leave a Reply