স্টাফ রিপোর্টার: অপহরণ ও অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন নওগাঁর মহাদেবপুরের নার্সারী ব্যবসায়ী মিঠুন চৌধুরী (২৭)। টর্চার সেলে তিন দিন আটকে রেখে তার উপর চালানো হয়েছে এই বর্বরতা।
রেহায় পাননি মিঠুন চৌধুরীর স্ত্রী শ্যামলী রাণীও (২৫)। মাধ্যযুগীয় কায়দায় চুল কেটে তাকেও নির্যাতন করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন আটদিন পর এই ঘটনার মামলা নিয়েছে মহাদেবপুর থানা পুলিশ। গ্রেফতার করেছে রুবাইয়া আকতার বৃষ্টি (২২) ও মুক্তা পারভীন (২১) নামের দুই নারীকে। তবে পলাতক মামলার প্রধান আসামী ও মূল অভিযুক্ত অভিযুক্ত রুহুল আমিন।
রুহুল আমীন মহাদেবপুর উপজেলার দক্ষিণ হোসেনপুর বোয়ালমারী মোড়ের চাতাল ব্যবসায়ী আবুল কালামের ছেলে। গ্রেফতার ওই দুই নারী তার স্ত্রী।
মহাদেবপুর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আজম উদ্দিন মাহমুদ জানান, রোববার (২২ আগস্ট) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নির্যাতনের শিকার শ্যামলী রাণী বাদী হয়ে মহাদেবপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। রাতেই থানা পুলিশ রুহুলের বাসায় অভিযান চালিয়ে তার দুই স্ত্রীকে গ্রেফতার করে।
কিন্তু মূল আসামী রুহুল পালিয়ে যান। পুলিশ তার ব্যবহৃত প্রাইভেটকার (ঢাকা-৭৫৫/৯) জব্দ করেছে। ওই বাসা থেকে ভুক্তভোগীদের স্বাক্ষর নেয়া ফাঁকা ষ্ট্যাম্প উদ্ধার করে পুলিশ।
মামলার অন্য আসামী হলো রুহুলের সহযোগী পত্নীতলা উপজেলার ছোট চাঁদপুর গ্রামের তরিকুল ইসলাম (৪০)। তাকেও গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।
ভুক্তভোগী শ্যামলী রাণী জানান, অভিযুক্ত রুহুল আমিন তাদের নার্সারী থেকে বিভিন্ন জাতের চারাগাছ কিনতেন। গত ১৫ আগস্ট সকালে রুহুল তার মিঠুনকে জোড়পূর্বক প্রাইভেটকারে তুলে মহাদেবপুরে নিয়ে যান।
সেখানে তার চাতালের বয়লারের সামনে অবস্থিত টর্চার সেলে মিঠুনকে আটকে রেখে অমানবিক নির্যাতন করেন। মুক্তিপণ হিসেবে মোবাইলফোনে ১০ হাজার টাকা পাঠাতে বলেন। কথামত শাশুড়ির গয়না বন্ধক রেখে তিনি বিকাশে ১০ হাজার টাকা পাঠান। পরে রুহুল ও তার লোকেরা আরও টাকা দাবি করেণ।
কিন্তু সেই টাকা দিতে পারেননি। ফলে তার স্বামীর পায়ের রগ কেটে দেন। আঙ্গুল জখম করেন। হাতুড়ি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। তিনদিন আটকে রেখে বর্বরতা চালানো হয় তার স্বামীর উপর। এই তিনদিন তাকে ঠিকমত খেতেও দেয়া হয়নি।
গত ১৭ আগস্ট নিরুপায় হয়ে তিনি মহাদেবপুর থানায় যান। সেখানে এসআই সাইফুল ইসলামকে বিষয়টি জানিয়ে আইনী সহায়তা চান।
পরে এসআই সাইফুল ইসলাম তাকে নিয়ে রুহুলের চাতালে যান। সেখানে পুলিশের উপস্থিতিতে রুহুল ও তার দুই স্ত্রী তাকে বেদম প্রহার করে মাথার চুল কেটে দেন। পরে এসআই সাইফুল সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। কিন্তু অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ। উল্টো অভিযোগ নিতে গড়িমশি করছিলো।
এদিকে, গত ২২ আগস্ট বিষয়টি জানাজানি হয়। পরে থানা পুলিশ ভুক্তভোগী শ্যামলী রাণীকে ডেকে এনে মামলা রেকর্ড করে। সাথে সাথে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করে জড়িত ওই দুই নারীকে। কিন্তু সহযোগীসহ পালিয়ে যান মূল অভিযুক্ত।
ভুক্তভোগীরা জানান, অভিযুক্ত রুহুলের চাতালে প্রায়ই বসে মাদকের আসর। সেখানে চলে অবাধ যৌনাচার। যারাই রুহুল আমীনের এই কাজের বিরোধীতা করতেন, তাদের তুলে নিয়ে গিয়ে আটকে রেখে বর্বরতা চালানো হতো।
জানা গেছে, রুহুল আমীন উপজেলা যুবদলের সক্রিয় সদস্য। কিন্তু সম্প্রতি প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায় বেপরোয়া হয়ে ওঠেন।
পুলিশের গাফেলতির বিষয়ে জানতে চাইলে মহাদেবপুর থানার ওসি আজম উদ্দিন বলেন, আসামী ধরতে পুলিশের কোন গাফলতি নেই। রুহুলকে গ্রেফতারের জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে। এনিয়ে আইনত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
Leave a Reply