শামীনূর রহমান: সাধারণত বিক্রেতারাই দাম হাঁকেন আগে। কিন্তু নওগাঁর মহাদেবপুরের মরিচের হাটে হচ্ছে ঠিক এর উল্টোটা। দাম বেধে দিচ্ছেন হাটের আড়ৎদার ও পাইকার মিলে।
সেই দামেই মচির বিক্রি করতে হচ্ছে প্রান্তিক চাষিদের। সেই সাথে দিতে বাড়তি এক কেজি করে। ঢলন হিসেবে এই এক কেজি মরিচের দাম পাচ্ছেননা কৃষক।
মরিচ চাষিরা বলছেন, তারা স্থানীয় পাইকার-আড়ৎদার সিন্ডিকেটে তারা জিম্মি। ফলে তারা ফসলের নায্য দাম পাচ্ছেননা। কিন্তু তাদের কিছুই করার নেই। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে এই শোষন চলছে। অথচ দেখারও কেউ নেই। তবে প্রশাসন বলছে, বিষয়টি তাদের জানা নেই।
উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম দক্ষিণ লক্ষ্মীপুর এলাকায় লাগানো হয়েছে মরিচের এ পাইকারি হাট। প্রতিদিন এখান থেকে ট্রাকে লোড হয় মরিচ। এরপর ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন বড় শহরে যায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০০৫ সালে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী ব্যক্তি ১০ শতক জমির উপর এ হাটটি বসান। তখন সপ্তাহে একদিন বসতো। গত চার বছর থেকে বসছে প্রতিদিন। মরিচের অফ সিজনে হাট বন্ধ থাকে। ভরা মওসুমে প্রতিদিন ৫০- ৬০ মেট্রিকটন মরিচ বিক্রি হয়।
বাজারদর নিয়ন্ত্রণ করেন এখানকার ২৭ জন আড়ৎদার। হাটে রোববার (২৯ আগস্ট) পাইকারী মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা দরে। যদিও উপজেলার বিভিন্ন বাজারে খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা কেজিতে।
প্রতিদিন সকালে আড়ৎদাররা মরিচের দাম ঘোষণা করেন। পাইকারদের সাথে যোগ দিয়ে মরিচের চাম বাঁধেন তারা। সেই অনুযায়ী একই দামে মরিচ কেনে।
সরজমিনে হাটে গিয়ে দেখা যায়, জমজমাট চলছে বেচাকেনা। মরিচ বিক্রি করতে আসা সাইদুর রহমান জানান, ২৫ কেজি মরিচ হাটে এনেছেন। বিক্রি করেছেন প্রতিকেজি ৫৭ টাকা দরে। আড়ৎদার ঢলন হিসেবে এক কেজি মরিচ বিনা পয়সায় নিয়েছেন। মরিচ চাষী মুজাহিদ হোসেনও জানালেন একই কথা।

হাটে টিনের ছাউনি দেয়া শেডে মরিচ কিনছিলেন আড়ৎদার আলমগীর হোসেন। এদিন তিনি দুই হাজার ৯৬৪ কেজি কাঁচা মরিচ কিনেছেন বলে জানান। এই আড়ৎদারের ভাষ্য, তারা রয়েছেন মোট ২৭ জন। নওগাঁ আড়তের পাইকারদের কাছ থেকে শুনে তারা মরিচের দিনের দাম নির্ধারণ করেন।
আলমগীর মরিচ দেন নওগাঁ আড়তের পাইকার সোহেল রানার কাছে। তার বেধে দেয়া দামে মরিচ কিনেন তিনি।
এছাড়া অন্যরা ঢাকা, চট্রগ্রামের আড়ৎদারদের বেধে দেয়া দামে মরিচ কিনেন। হাটের উন্নয়নের জন্যও টনপ্রতি নেয়া হয় ১০০ টাকা। একই কথা জানালেন কুতুবুল আলম, দুলাল হোসেন, সেফাতুল ইসলামসহ আরও কয়েকজন আড়ৎদার।
স্থানীয় সফাপুর ইউপি চেয়ারম্যান সামসুল আলম বাচ্চু বলেন, হাটটি থেকে সরকার ও ইউনিয়ন পরিষদ কোন রাজস্ব পায়না। রাজস্ব বঞ্চিত করে হাট চালুর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।
জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অরুন চন্দ্র রায় বলেন, চলতি বছর উপজেলায় ৫৫০ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচের চাষ হয়েছে। গত চার বছর ধরে মরিচের আবাদ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এবিষয়ে মহাদেবপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মিজানুর রহমান মিলন বলেন, মরিচের হাটের বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে জানান তিনি।
Leave a Reply