বগুড়া: হঠাৎই একদিন হারিয়ে যান আমেনা খাতুন। সেও ২২ বছর আগে। অনেক খুঁজেও সন্ধান মেলেনি বগুড়ার ধুনট উপজেলার নিমগাছি ইউনিয়নের মাঝবাড়ি গ্রামের আজগর আলী প্রামানিক এর স্ত্রী আমেনা খাতুনের।
তার স্বামী মারা গেছেন বহু আগে। তিন ছেলে ও এক মেয়ের সবাই ভেবেই নিয়েছিলেন মা হয়তো মারা গিয়েছেন। জাতীয় পরিচয়পত্রে মায়ের নামের আগে মৃত উল্লেখ করেছেন তারা। কিন্তু মৃত মা সন্তানদের মাঝে ফিরলেন একেবারেই জলজ্যন্ত।
এই ২২ বছর নেপালে কাটিয়ে সোমবার তিনি দেশে ফেরেন। রাজধানীর হযরত শাহজালার আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর থেকে অশীতিপর আমেনা বেগমকে বাড়ি নিয়ে ফেরেন স্বজনরা।
এর আগে ভিডিও কলে সন্তানরা মায়ের সাথে কথা বলেন। বৃদ্ধা আমেনা বেগম প্রথম দর্শনেই চিনতে পারেন সন্তানদের। সন্তানরাও মাকে চিনতে ভুল করেননি।
জানা যায়, আমেনা খাতুনের স্বামী আজগর আলী প্রামাণিক পেশায় কাঠমিস্ত্রি ছিলেন। তিন ছেলের পর এক মেয়ের জন্ম দেন আমেনা। বড় ছেলে আমজাদ হোসেনের বয়স ৬০ বছর, মেজ ছেলে ফটিক হোসেনের বয়স ৫৮ বছর, ছোট ছেলে ফরাজুল হোসেনের বয়স ৫৪ বছর ও ছোট মেয়ে আম্বিয়া খাতুনের বয়স ৪৫ বছর।
প্রথম তিন ছেলে সন্তানের জন্ম হওয়ার পর আমেনা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। এরমধ্যে ১৯৯৮ সালে তাদের সন্তানদের মধ্যে ফটিক মিয়া সৌদি আরবে চলে যান। এই সময়ে ছেলে সৌদি যাওয়ার কারণে কষ্ট অনুভব করতেন।
এর এক পর্যায়ে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্যহীন আমেনা খাতুন বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। এরপর আর তার কোনো খোঁজ মেলেনি। বিভিন্ন স্থানে খোঁজ না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা ধরে নেন তিনি হয়তো মারা গেছেন।
এরমধ্যে হঠাৎ করে গত মে মাসে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) লোকজন আমেনা খাতুনের সন্তানদের সাথে যোগাযোগ করে মা আমেনা খাতুন নেপালে রয়েছেন বলে জানায়। মায়ের ছবি দেখে সন্তানরা নিশ্চিত হন।
এরপর ৩ সেপ্টেম্বর নেপালে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর মাসুদ আলম আমেনার সন্তানদের সাথে ভিডিও কলে কথা বলার ব্যবস্থা করে দেন। ভিডিও কলে আমেনা তার সন্তান ও স্বজনদের চিনতে পারেন।
বাংলাদেশ দূতাবাসের কাউন্সিলর মাসুদ আলম সাংবাদিকদের জানান, নেপালে অবস্থানকালে নেপালের কাঠমুন্ডু থেকে থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার দূরে সুনসারি জেলার ইনারোয়া পৌরসভার ডেপুটি মেয়র গত ৩০ মে ফেসবুকে আমেনার ছবি পোস্ট করে জানান বাংলাদেশি এক বৃদ্ধাকে পাওয়া গেছে।
যিনি অন্য এক নারীর কাছে আশ্রীত। ফেসবুকের লিংক ধরে মাসুদ আমেনার কাছে পৌঁছে অনেক চেষ্টার পর বাংলাদেশের আমেনার ঠিকানা পেয়ে যান। পরিবারের সদস্যদের সাথে এনএসআই এর মাধ্যমে যোগাযোগ করা হয়।
পরে সম্পূর্ণ সরকারি খরচে নেপাল থেকে অসহায় আমেনাকে উদ্ধার করে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এসময় তিনি বলেন, সরকারি দ্বায়িত্ব পালনের পাশাপাশি অসহায় মানুষের সেবা করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছেন।
আমেনা খাতুনের ছেলে ফটিক মিয়া জানান, প্রায় ২২ বছর পর মাকে পেয়ে তারা খুব খুশি। এতদিন মাকে মৃত ভেবে আসতাম। মা ১৯৯৮ সালে অভিমান করে বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। ওই সময় মা কিছুটা ভারসাম্যহীন ছিল। মা তাদেরকে চিনতে পেরেছেন। তাদের সকল আত্মীয় স্বজন মাকে দেখতে অপেক্ষা করছে।
আমেনার বড় ছেলে আমজাদের পুত্র আদিলুর রহমান আদিল জানান, সরকারিভাবে তার দাদীকে তাদের পরিবারে ফিরে দেওয়া হয়েছে। তাদের কোন টাকা খরচ হয়নি। সরকারের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
তিনি আরো জানান, তার যখন ৮ বছর বয়ন তখন তার দাদী নিখোঁজ হয়। দাদী তাকে না চিনলেও দাদীকে সে চিনতে পেরেছে। তার দাদীকে দেখার জন্য গ্রামের শতশত মানুষ অপেক্ষা করছেন। আত্মীয়স্বজনরা অপেক্ষা করছে। ঢাকা থেকে সরাসরি ধুনটের মাঝ গ্রামে যাবে। সেখানেই সকলেই আপেক্ষায় রয়েছে।
Leave a Reply