শামীনূর রহমান: আপনারা আজ অবাক করা নামের এক ধরনের পাখি সম্বন্ধে জানবেন। এর নাম কসাই পাখি। কসাই পাখি নাম হওয়ার কারণ আছে। অদ্ভুত শিকার ধরার ক্ষমতা আছে এদের।

শিকার করা প্রাণী মেরে তা কাঁটা বা অন্য কোনো চোখা জিনিসে গেঁথে ফেলে। পরে সময় বুঝে তা খায়। অর্থাৎ শিকারের আচরণ বা স্বভাব অনেকটাই কসাইয়ের মতো বলে এদের কসাই পাখি বলা হয়ে থাকে। কসাই পাখির ঠোঁট খুবই শক্তিশালী।

দু’পাশের চাপা, সামনের অংশে শক্ত দাঁত রয়েছে। দাঁতগুলোয় রয়েছে গভীর খাঁজ। অন্যান্য শিকারি পাখির মতো কসাই পাখির উপরের ঠোঁট বড়শির মতো বাঁকানো। অর্থাৎ ঠোঁটে কিছু আটকা পড়লে তা খুলে বা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।

 দাঁতগুলোয় গভীর খাঁজ থাকার কারণে অনেকে কসাই পাখিকে কুমির পাখিও বলে থাকে। কারণ এদের শারীরিক শক্তি অন্যান্য পাখির তুলনায় অনেক বেশি। আকারে ২০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে কসাই পাখি।

প্রায় গোলাকার নাকের ছ্যাদা বা ফাঁক। পালক খুবই শক্ত। ডানা কিছুটা গোলাকার। ডানার প্রান্ত সুচালো বা চোখা। লেজ ডানার প্রায় সমান এবং লেজ পাখির শরীরের তুলনায় যথেষ্ট বড়।

যে কারণে একটু দূর থেকে লেজই আগে নজরে আসে। দেহের বেশির ভাগ অংশ ধূসর বা বাদামি রঙের। পাশাপাশি রয়েছে লালচে, কালো ও সাদা রঙ। মাথা, পাখা ও লেজের অনেকাংশ জায়গা বা অংশ কালো। পা কিছুটা কালচে।

কসাই পাখি নির্দিষ্ট জায়গার মধ্যে থাকতে বেশি পছন্দ করে। অর্থাৎ নিজের এলাকা ছেড়ে খুব দূরে সাধারণত যায় না। অন্য এলাকার পাখি তাদের এলাকায় আসবে, এমনটিও সহ্য করতে চায় না।

এদের স্বভাব একাকী চলাফেরার। শুধু ডিম পাড়ার সময় হলে জোড়া বাঁধে। এ কারণে অনেকে এ পাখিকে হিংসুটে পাখি বলে। তবে মজার বিষয় হলো, পরিযান বা দূরে কোথাও যেতে হলে কৌশলে সেই জায়গাও ঠিক করে নেয়।

তবে জায়গা বা স্থান দখল নিয়ে এদের মধ্যে ঝগড়া বাধে। সাধারণত শিকার ধরার উদ্দেশ্যে কসাই পাখিরা বিস্তীর্ণ খোলা প্রান্তরের কোনো উঁচু গাছের ডালে বসে থাকে। বিভিন্ন পোকামাকড় ইঁদুর, টিকটিকি, ছোট সাপ ইত্যাদি শিকার করে ওরা। তবে অবাক বিষয় হচ্ছে, অনেক সময় রাগের বশে ছোট পাখিও শিকার করে।

খোলা তৃণভূমি, আবাদি জমি প্রভৃতি জায়গায় এদের বেশি দেখা যায়। মাঝে মধ্যে দেখা যায় ঘন বা গহিন বনে। শীতকালে এরা পরিযায়ী হয় বা দূর অঞ্চলে যায়। ডিম দেয় গ্রীষ্মকালে।

ইউরেশিয়া আর আফ্রিকায় বেশির ভাগ কসাই পাখির আবাস বা বিচরণ। তবে দুটো প্রজাতি, বড় মেটে কসাই আর মোটামাথা কসাই উত্তর আমেরিকায় ডিম পাড়তে যায়। সেখানে এদের বংশবৃদ্ধি বেশি। এর কোনো প্রজাতি চোখে পড়ে না দক্ষিণ আমেরিকা আর অস্ট্রেলিয়ায়।

কসাই পাখিকে অনেকে ল্যাঞ্জা লাটোরা, বাঘটিকি ইত্যাদি নামেও চেনে। এদের রয়েছে নানা প্রজাতি। উল্লেখযোগ্য প্রজাতিগুলো হচ্ছে তামাপিঠ কসাই, খয়েরি কসাই, লালপিঠ কসাই, পাহাড়ি কসাই, হলদেঠুঁটি কসাই, মুখোশপরা কসাই ইত্যাদি।

কসাই পাখির ইংরেজি নাম শ্রাইক। এরা ল্যানিডি গোত্রের অন্তর্ভুক্ত। এরা ছোট আকারের মাংসাশী পাখি। বাংলাদেশেও এ পাখি দেখা যায়।

Leave a Reply