বিএমডিএর ৫০ লাখ টাকা আত্মসাৎ, ৩ মামলা দুদকের

স্টাফ রিপোর্টার: বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ৫০ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে তিন কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে তিনটি মামলা হয়েছে। বুধবার (২৫ জানুয়ারি) দুপুরের দিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে মামলাগুলো দায়ের হয়। পরে নথি রাজশাহী মহানগর দায়রা জজ আদালতে পাঠিয়েছে দুদক।

দুটি মামলায় আসামি করা হয়েছে বিএমডিএর সাময়িক বরখাস্ত হওয়া সহকারি কোষাধ্যক্ষ খাবির উদ্দিনকে (৪৫)। এরমধ্যে একটি মামলায় তার সাথে আসামি হয়েছেন বিএমডিএর সহকারি প্রকৌশলী জিএফএম হাসনুল ইসলাম (৫৫)। অপর মামলাটিতে একমাত্র আসামী সাময়িক বরখাস্ত সহকারি হিসাবরক্ষক মতিউর রহমান (৫০)।

তারা তিন জনই একসময় বিএমডিএর রাজশাহীর গোদাগাড়ী-২ জোন দপ্তরে কর্মরত ছিলেন। ২০১০ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন সময় এখানে ৫০ লাখ ২৮ হাজার ১৫৮ টাকা আত্মসাৎ হতের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। ঘটনা ধামাচাপা দিতে প্রমাণ লোপাটেরও প্রমাণ পেয়েছে দুদক।

মামলা তিনটিরই বাদি দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারি পরিচালক আমির হোসাইন। বিকেলে তিনিই এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, খাবির উদ্দিন ও জিএফএম হাসনুল ইসলাম ১৮০টি ব্যাংক চেক ঘষা-মাজা করে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৪৩৪ টাকার পরিবর্তে ৩৯ লাখ ৪৫ হাজার ১৫২ টাকা উত্তোলন করেন। পারস্পরিক যোগসাজোশে ৩৭ লাখ ৬৭ হাজার ৭১৮ টাকা আত্মসাত করেন তারা। ২০১২ সালের ২৮ জুন থেকে  ২০১৬ সালের ৫ মে পর্যন্ত  এই ঘটনা ঘটে।

ঘটনা ধামাচাপা দিতে আগুন দিয়ে আলামত গায়েবও করে দেন। যা দণ্ডবিধির ৪০৯/৪২০/২০১/১০৯ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। প্রাথমিক তদন্তে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

বাদি আরও বলেন, এই দুজনের তাদের বিরুদ্ধে দুদকে সুনির্ষ্টি অভিযোগ ছিল। এনিয়ে গত বছরের ১ নভেম্বর বিকেলে বিএমডিএতে অভিযান চালায় দুদক। পরদিন ২ নভেম্বর দুপুরর দিকে আবারো অভিযান চালানো হয়।

দুই দফা অভিযানে বেশ কিছু নথিপত্র জব্দ করে দুদক। পরে সেগুলো পর্যালোচনা করে দুজনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের প্রমাণ মেলে। পরে দুদকের প্রধান কার্যালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হয়। গত ১৬ জানুয়ারি এই দুজনের নামে এজাহার অনুমোদন দেয় দুদক। এর প্রেক্ষিতে বুধবার মামলা দায়ের করা হয়। মামলা নম্বর-১। পরে আদালতে মামলার নথি পাঠানো হয়েছে।

এদিকে, খবির উদ্দিনের নামে দায়ের হওয়া অপর মামলাটি দণ্ডবিধির ৪০৯/২০১ ধারা তৎসহ দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারার। মামলা নম্বর-২। এই মামলায় তার বিরুদ্ধে ১১ লাখ ৩৯ হাজার ১১৮ আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে।

জানা গেছে, খবির উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০১১ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোবাইল ভেন্ডিং ইউনিট রিচার্জ থেকে আয় ১০লাখ হাজার ৮৮ হাজার ২৪৮ টাকা এবং মানি রশিদ বহিমূলে  আদায় ৫০ হাজার ৮৭০ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ আনা হয়েছে। নথিপত্র যাচাইকালে ৫টি মানি রশিদ বইয়ের ১৯৪টি পাতা পাওয়নি দুদক।

অন্যদিকে, আসিামি মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে ২০১০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর থেকে ২০১১ সালের ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত এমভিইউ রিচার্জ থেকে আয় ১ লাখ ২১ হাজার ৩২২ টাকা আদায় করে আত্মসাতের প্রমাণ পেয়েছে দুদক। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪০৯/২০১ ধারা তৎসহ ১৯৪৭ সনের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলা হয়েছে। মামলা নম্বর-৩।

জানা গেছে, অভিযুক্ত জিএফএম হাসনুল ইসলাম ২০০২ সালের দিকে উপসহাকারী প্রকৌশলী হিসেবে গোদাগাড়ী-২ জোনে দায়িত্বে ছিলেন। সহকারী প্রকৌশলী হিসেবেও ২০১২ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত জোন প্রধানের দায়িত্বপালন করেন তিনি।

ওই সময় চেক জালিয়াতি করে বিএমডিএ প্রায় ৫৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠে হাসনুল ইসলামের বিরুদ্ধে। এই কাণ্ডে তার সহযোগী ছিলেন আরেক সহকারী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসেন। আনোয়ার হোসেন এখন নওগাঁর মান্দা জোনে কর্মরত।

অন্যদিকে হাসনুল ইসলাম দায়িত্বপালন করছেন রাজশাহীর মোহনপুর জোনে। এর আগে নওগাঁ রিজিওন, মোহনপুর এবং রাণীনগরে দায়িত্বপালন করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে প্রত্যেক এলাকাতেও অর্থের বিনিময়ে এসটিডাব্লিউ স্থাপনসহ নানান অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

দুই দফা তদন্ত করে দুইজনের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতে সম্পৃক্ততা পায় বিএমডিএ। শেষে কৃষি মন্ত্রণালয়ের তদন্তেও অর্থ আত্মসাতে এই দুজনের সম্পৃক্ততা উঠে আসে। তাদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ ছিল মন্ত্রণালয়ের। এরপরও বহাল তবিয়তে রয়েছেন তারা।

দুই সহকারী প্রকৌশলীর অপকর্মের সহযোগী সহকারি হিসাবরক্ষক মতিউর রহমান ও সহকারি কোষাধ্যক্ষ খাবির উদ্দিন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে দুজনকেই সাময়িক বরখাস্ত করে বিএমডিএ। কিন্তু দুই প্রকৌশলী থেকে যান বহাল তবিয়তে।

Leave a Reply