স্টাফ রিপোর্টার, রাবি: স্থানীয় ও রাজশাহী বিশ্বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যকার সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশের গুলিতে ৮ জন শিক্ষার্থী আহত হয়ে হাসপাতলে ভর্তি আছেন। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
শনিবার (১১ মার্চ) দিবাগত রাত ১১ টার দিকে এই গুলির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় সংলগ্ন রেললাইন অবরোধ করে আন্দোলন করছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রাতে পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ এসে এলোপাতাড়ি রাবার বুলেট নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের অন্তত: ১০ জন শিক্ষার্থীর গায়ে গুলি লাগে। গুরুতর অবস্থায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন: সব পক্ষকে শান্ত থাকার আহবান রাসিক মেয়রের
শিক্ষার্থীদের গুলিবিদ্ধ হবার বিষয়টি নিশ্চিত করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জনসংযোগ প্রশাসক অধ্যাপক ড. প্রদীপ কুমার পান্ডে।তিনি বলেন, ‘আহত শিক্ষার্থীদের মধ্যে আছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা আছে ।
গুলিবিদ্ধদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের জরুরি বিভাগে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। তাতে আইসিইউতে নেয়া হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের ওপর গুলির প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলায় সংলগ্ন রেললাইন অবরোধ করে আন্দোলন করছে।
রেলপথ অবরোধ থাকায় কেবল চাঁপাইনবাবগঞ্জ ছাড়া রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের সাথে অন্য সব জেলার ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনে কোন ট্রেন ঢুকছে না, বেরও হচ্ছেনা।
আরও পড়ুন: আগামী দুদিন রাবির ক্লাস-পরীক্ষা স্থগিত
রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের ব্যবস্থাপক আবদুল করিম বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ শিক্ষার্থী শুয়ে-বসে আছে। ট্রেন যাওয়ার কোনও উপায় নেই। তাই রাতে রাজশাহী থেকে ঢাকামুখী ধূমকেতু এক্সপ্রেস ট্রেনটি ছেড়ে যেতে পারেনি। রাত ১১টা ২০ মিনিটে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্য রাজশাহী ছেড়ে যাবার কথা ছিল।
রেললাইন অবরোধ থাকায় ঢাকা থেকে রাজশাহী হয়ে একটি মেইল ট্রেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ যেতে পারেনি। ট্রেনটি নাটোরের আবদুলপুর জংশনে আটকে আছে বলে জানান ব্যবস্থাপক।
আরও পড়ুন: রাবি এলাকায় বিজিবি মোতায়েন
শিক্ষার্থী ও স্থানীয়রা জানিয়েছেন, শনিবার বগুড়া থেকে মোহাম্মদ পরিবহনের বাসে করে রাজশাহী আসছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী আলামিন আকাশ। বাসে সিটে বসা এবং ভাড়াকে কেন্দ্র করে পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়।
বাসটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর গেইটে এলে আবারও পরিবহন শ্রমিকদের সঙ্গে ওই শিক্ষার্থীর বচসা হয়। তখন স্থানীয় এক দোকানদার এসে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তর্কে জড়ান। একপর্যায়ে উভয়র মধ্যে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে।
তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা ঘটনাস্থলে জড়ো হন এবং স্থানীয় দোকানদারদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে স্থানীয়রা একজোট হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও পাল্টা ধাওয়া করে।
আরও পড়ুন: রাবি শিক্ষার্থী ও স্থানীয়দের মধ্যে সংঘর্ষ, পুলিশ ফাঁড়িতে আগুন
শিক্ষার্থীরা উত্তেজিত হয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে দেয়। এ সময় একে-অপরকে লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকে। সন্ধ্যায় এ ঘটনার সূত্রপাত হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর বাজার সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়কে। ধীরে ধীরে তা ওই এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
সংঘর্ষের পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিনোদপুর ফটকের পুলিশ বক্সটি পুড়িয়ে দেন বিক্ষুব্ধরা। আগুনে পুলিশ বক্সের পাশে কয়েকটি দোকানঘরও পুড়ে যায়। রাত পৌনে ১০টার দিকে ফায়ার সার্ভিস এসে দোকানপাট ও পুলিশ বক্সের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় বিপুল সংখ্যক পুলিশ মোতায়েন করেছে প্রশাসন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ৫ প্লাটুন বিজিবি নামানো হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায়। উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে রোববার ও সোমবারের সব ধরনের পরীক্ষা ও ক্লাস স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে।
Leave a Reply