হাসপাতাল থেকে ছাড় পেয়েছেন ৮০ শতাংশ রোগী
হাসপাতাল থেকে ছাড় পেয়েছেন ৮০ শতাংশ রোগী

স্টাফ রিপোর্টারঃ স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের পর রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ৯৬ জন। এছাড়া আহত হন প্রায় তিন শতাধিক। তারা বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার থেকেই প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছে। আহতদের মধ্যে অধিকাংশই রাবি শিক্ষার্থী। তাছাড়া পুলিশ ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও রয়েছেন। এর প্রায় ৮০ শতাংশ রোগী হাসপাতাল থেকে ছাড় পেয়েছেন।

রোববার (১২ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে রামেক হাসপাতাল কতৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হয় ৯৬ শিক্ষার্থী। এখন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি আছে ২০ থেকে ২৫ জন। তাদের মধ্যে তিনজনের চোখে ও তিনজনের পুরো শরীরে গুলির ক্ষত চিহ্ন আছে। একজনকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে। তার অবস্থা আগের তুলনায় ভালো বলেন জানিয়েছেন রামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহমেদ।

তিনি বলেন, প্রায় দেড় শতাধিক রোগী এখানে রিপোর্ট করে। এদের মধ্যে ৯৬ জনকে হাসপাতালে এডমিট করা হয়। একজনের অবস্থা গুরুতর, তিনি আইসিইউতে ভর্তি রয়েছেন। তিনি গতকাল যেভাবে ভর্তি হয়েছিল তার চাইতে আজকে একটু ইমপ্রুভ (উন্নত) হয়েছে। তার রক্তক্ষরণ হয়েছে যে কারণে আমরা ব্লাডের ব্যবস্থা করেছি। আর বাকি যারা এসেছেন বিভিন্ন আঘাত নিয়ে এসেছেন তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এর মধ্যে কেউ মাথায় আঘাত আবার কারো চোখে আঘাত লেগেছে।

আমাদের এখানে ২ বার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রোগীরা এসেছেন। প্রথমত অবস্থায় তেমন গুরুত্ব রোগী আমরা পায়নি। পরবর্তীতে দ্বিতীয় ধাপে যে রোগী গুলো এসেছিল তাদের বেশ গুরুত্ব লক্ষ্য করেছি। মূলত দ্বিতীয়বার যেই ঘটনা ঘটেছে সেটি পুলিশ সদস্যা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ (কন্ট্রোল) করতে গিয়ে পুলিশের সাথে শিক্ষার্থীর একটা ধাওয়া পাল্টা হয়। আর সেখানেই বেশ কিছু শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়।

তিনি বলেন, ঘটনা শোনার পর পরই আমাদের টিমকে অ্যালার্ট করি। তারা সাথে কাজ করা শুরু করেছেন। এখন পর্যন্ত আমরা সজাগ আছি। আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি। এর থেকে বেশি কিছু হলে আমরা সর্বোচ্চ সেবা দেওয়ার চেষ্টা করব।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূর বলেন, আমরা চাচ্ছি আমাদের ছাত্রদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। আমাদের সব ছাত্ররা যেন চিকিৎসা পায় সেটি দেখভাল করছি। ছাত্রদের সবার অবস্থা মোটামুটি ভালো আছে। শনিবার রাতে সংঘর্ষের মাত্রা তীব্র হলে পরিস্থিতি শান্ত করতে পুলিশ এসে এলোপাতাড়ি রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করতে থাকে। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রায় ১০ শিক্ষার্থীর গায়ে গুলি লাগে। গুরুতর অবস্থায় তাদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক)। গুরুতর আহত শিক্ষার্থীদের রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আহত শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লার সাথে কথা হয়। তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আমার সাত শিক্ষার্থীর অবস্থা খুবই গুরুতর। তাদের শরীরে বুলেটের চিহ্ন আছে। বিশেষ করে ৮ জন শিক্ষার্থীর চোখে বুলেট লেগেছে। এক শিক্ষার্থীর মাথায় বুলেট লেগেছে তাকে আইসিইউতে ভর্তি রাখা হয়েছে। ‍ তার নাম মো রাকিব। অন্যদেরও চিকিৎসা চলছে।

রাবির আরও কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, আহত শিক্ষার্থীরা হাসপাতালের ভিভিন্ন ওয়ার্ডে ভর্তি আছে। এর মধ্যে দুই ও আট নম্বর ওয়ার্ডে বেশি ভর্তি হয়েছেন। হাসপাতালে আসার পরে চিকিৎসকরা তাৎক্ষণিক চিকিৎসা শুরু করেছেন। অনেকে চিকিৎসা বাসায় চলে গেছেন।

কয়েকজনের সাথে কথা বলার পর মিডিয়ার সাথে কথা বলতে চান কোনো শিক্ষার্থী। তারা ছাত্র রাবির উপদেষ্ঠার সাথের কথা বলতে বলেন। তাদের সাসনে থাকলে পরিস্থিতি ভিন্ন পর্যায়ে যাওয়ার কথা বলেন।

কথা হয় ছাত্র রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা তারেক নূরের সাথে। তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি আমাদের ছাত্রদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে। আমাদের সব ছাত্ররা যেন চিকিৎসা পায় সেটি দেখভাল করছি। ছাত্রদের সবার অবস্থা মোটামুটি ভালো আছে। তবে কয়েকজনের অবস্থা বেশ গুরতর। তাদের চিকিৎসা চলছে। এদের একজন হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি আছে। তার অবস্থা খুবই খারাপ।

এদিকে আন্দোলন চলাকালীন কয়েকজন সাংবাদিকের ওপরে হামলা চালান শিক্ষার্থীরা। এতে চ্যানেল ২৪ এর রিপোর্টার আবরার শাইর ও অফিস সহকারী জুয়েল আহত হয়েছেন। তাদের উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া কালের কণ্ঠের রাজশাহীর ফটোসাংবাদিক সালাউদ্দিনের ক্যামেরা ভাঙচুর করেছে শিক্ষার্থীরা।

চ্যানেল ২৪ এর রিপোর্টার আবরার শাইর বলেন, আমাদের চ্যানেল থেকে গত কালকে লাইভ টেলিকাস্ট হয়েছে এই ঘটনাটির। আমরা তখন শিক্ষার্থীদের উত্তাপে ভেতরে যেতে পারিনি। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে ঢুকতে না পারাই বাইরে থেকে একপক্ষের বক্তব্য নিতে হয়েছিল। পরবর্তীতে কিছু শিক্ষার্থীর বক্তব্য পাওয়া যায়। কিন্তু সেটিকে তারা বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করে আমাদের উপর আক্রমণ চালানো শুরু করে। এবং আমাকে ও আমার সহকারি জুয়েলকে মারধর শুরু করে।

কালের কণ্ঠের রাজশাহীর ফটোসাংবাদিক সালাউদ্দিন বলেন, আমি ক্যামেরা চালাইনি শুধু নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম। শিক্ষার্থীরা আমার ক্যামেরা কেড়ে নিয়ে ভাঙচুর চালিয়েছে।

উল্লেখ্য, শনিবার বগুড়া থেকে বাসে করে রাজশাহী আসছিলেন রাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী। সিটে বসাকে কেন্দ্র করে এক ব্যক্তির সঙ্গে বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে স্থানীয়দের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। ঘটনার পরে বিজিবি মোতায়েন করা হয়।

Leave a Reply