প্রকাশিত:
১২ অক্টোবার ২০২৩, ২১:১৩
কক্সবাজারে গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাওয়া একটি ট্রলারসহ ১৭ জন মাঝি-মাল্লা ২২ দিন ধরে নিখোঁজ রয়েছেন। গত ২০ সেপ্টেম্বর কক্সবাজার পৌরসভার টেকপাড়া মাঝির ঘাট এলাকার বাঁকখালী নদীর ঘাট থেকে মাছ ধরার উদ্দেশ্যে সাগরে রওনা হয় ট্রলারটি। এরপর থেকে মাঝি-মাল্লাদের আর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না।
এ ঘটনায় চলতি মাসের ৩ তারিখে এফবি রামীম নামের ওই ট্রলারের মালিক খোরশেদ আলম সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। খোরশেদ আলম কক্সবাজার সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের কাউয়ার পাড়া এলাকার রমজান আলীর ছেলে।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুজ্জামান সাধারণ ডায়েরির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নিখোঁজ মাঝি-মাল্লারা হলেন মিজান, বেলাল, আমির আলী, নাহির, বেক্কা, মাদু, খোকন, এহেছান, আজিজ, আজিজুল হক, মো. মিয়া, রুবেল, ছৈয়দ, আব্দুল্লাহ, কাশেম, রিয়াজ উদ্দীন ও মো. আমিন। তারা সবাই কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন এলাকায় বসবাস করেন।
নিখোঁজের বিষয়ে সাধারণ ডায়েরিতে ট্রলারের মালিক খোরশেদ আলম উল্লেখ করেছেন, গত ২০ সেপ্টেম্বর বেলা ১১টার দিকে ট্রলার নিয়ে ১৭ জন মাঝি-মাল্লা কক্সবাজার পৌরসভার টেকপাড়া মাঝির ঘাট এলাকাস্থ বাঁকখালী নদীর ঘাট থেকে গভীর সাগরে মাছ আহরণের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।
নিয়ম অনুযায়ী ১০/১১ দিনের মধ্যে মধ্যে গভীর সাগর থেকে কক্সবাজারের উপকূলে ট্রলারটি ফিরে আসার কথা। এই সময়ের মধ্যে ফিরে না আসায় ট্রলারে থাকা মাঝি-মাল্লাদের কয়েকজনের ফোন নম্বরে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয় কিন্তু তা বন্ধ পাওয়া যায়।
খোরশেদ আলম জানান, ২০ সেপ্টেম্বর গভীর সাগরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেওয়া ট্রলারটি উপকূলে ফেরার কথা গত ৩০ সেপ্টেম্বর। কিন্তু সেদিন সাগরে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ছিল। ওই সময় ঘাটে সব ট্রলার নিয়ে মাঝি-মাল্লারা ফিরে আসেন।
কিন্তু তার ট্রলার ও মাঝি-মাল্লারা ফিরে আসেনি। পরে তাদের ট্রলারে থাকা জিপিআরএস ট্যাক করা হয়। তবে তাদের অবস্থান জানা যায়নি। মাঝি-মাল্লাদের অবস্থান নিশ্চিত না হওয়ায় নিখোঁজদের পরিবারের পাশাপাশি তিনি নিজেও উৎকণ্ঠায় রয়েছেন।
নিখোঁজ মাঝি-মাল্লাদের মধ্যে বেলাল থাকেন কক্সবাজার শহরের পেশকারপাড়ায়। তার স্ত্রী মারুফা জান্নাত জানান, স্বামীসহ এক ছেলে ও এক মেয়ের সংসার তাদের। সাগরে যাওয়ার সময় ২০ সেপ্টেম্বর শেষ কথা হয়েছে স্বামীর সঙ্গে। এখন নিখোঁজ থাকায় তিনি উৎকণ্ঠায় আছেন।
নিখোঁজ ট্রলারের চালক আমির আলী লক্ষ্মীপুর জেলার কমলনগর এলাকার বাসিন্দা। তার ভাতিজা আহসান উল্লাহ বলেন, আমির আলীর পরিবার জানে না নিখোঁজদের ঠিক কী পরিণতি হয়েছে। এতে তার পরিবারের সদস্যদের কান্না যেন থামছেই না। তাই সংশ্লিষ্টদের কাছে নিখোঁজদের উদ্ধারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
কক্সবাজার ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘ট্রলারটিসহ মাঝি-মাল্লাদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার জন্য নানাভাবে তৎপরতা চালানো হচ্ছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে দেশের জলসীমা অতিক্রম করে বিদেশের জলসীমায় চলে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাদের উদ্ধারের জন্য প্রশাসন বিশেষ করে নৌবাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।’
এ বিষয়ে কক্সবাজার সদর থানার ওসি রকিবুজ্জামান বলেন, সাধারণ ডায়েরি হওয়ার পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় ট্রলারটির অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার চেষ্টা চলছে। একই সঙ্গে নৌপুলিশ ও কোস্ট গার্ডসহ অন্যান্য বাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করে কোস্ট গার্ডের পূর্ব জোনের এক কর্মকর্তা বলেন, সাধারণ ডায়েরির একটি কপি হাতে পেয়েছেন। ট্রলার ও মাঝি-মাল্লাদের উদ্ধারের নানাভাবে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে।
বরেন্দ্র এক্সপ্রেস/এফএস
মন্তব্য করুন: